ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় স্বামীর নির্যাতনে গৃহবধূ নিহত: ধামাচাপা দিতে মরিয়া প্রভাবশালী মহল

nihotপেকুয়া প্রতিনিধি ::

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনে শুক্রবার সকালে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছে। পুলিশ নিহতের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। নিহত গৃহবধূর নাম ইয়াসমিন আকতার (২০)। সে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের পেকুয়ারচর গ্রামের শাহাজাহানের কন্যা। ঘটনার পর পরই ঘাতক স্বামী সাইফুল ইসলাম (২৩) কে আটক করে স্থানীয়রা পেকুয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ্দ করেছে।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাস পূর্বে পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাইম্যা খালী গ্রামের কামাল হোসেনের পুত্র সাইফুল ইসলাম ও পেকয়ার চর গ্রামের শাহাজাহানের কন্যা ইয়াসমিন আকতার উভয়ই পরিবারের অজান্তে পালিয়ে বিয়ে করে। ঘটনার দিন শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকালে মূমর্ষ অবস্থায় ইয়াসমিনকে উজানঠিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুতাচোরা গ্রামে তার বোনের বাসায় নিয়ে যান স্বামী সাইফুল ইসলাম। এসময় ইয়াসমিনের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত ও মূমূর্ষ অবস্থায় থাকায় বোনের জামাই তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে কৌশলে ইয়াসমিনকে তার বোনের বাসায় রেখে পালিয়ে যায় সাইফুল ইসলাম। পালিয়ে যাওয়ার পথে উজানটিয়া ইউনিয়নের সোনালী বাজার এলাকা থেকে ইয়াসমিনের স্বামী সাইফুল ইসলামকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে সাইফুল ইসলামকে পেকুয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ্দ করে স্থাণীয়রা। অপরদিকে ইয়াসমিন আক্তারকে মূমুর্ষ অবস্থায় তার বোনের স্বামী ও এলাকবাসীরা শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে পেকুয়া সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, দুই জনই পালিয়ে বিয়ে করার পর থেকে স্বামী সাইফুল ইসলাম প্রায় সময় যৌতুকের জন্য ইয়াসমিনকে মারধর করত। ঘটনার দিনও ইয়াসমিনকে মারধর করেছে স্বামী। মূমুর্ষ অবস্থায় ইয়াসমিনকে বোনের বাড়ীতে রেখে যেতে আসেন ঘাতক সাইফুল ইসলাম।

জানা গেছে, সর্বশেষ গতকাল রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেয়ের পরিবার থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ দাখিল করেননি। স্থানীয় চার প্রভাবশালী ইউপি সদস্যের চাপের মুখে মেয়ের পরিবার থানায় ঘাতক স্বামীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ দেয়নি। ফলে ঘাতক স্বামী পার পেয়ে যাচ্ছে। ঘাতকের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকে ম্যানেজ হয়ে ওই চার ইউপি সদস্য ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহত গৃহবধূর লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে।

স্থানীয় বেশ কয়েকজন সচেতন নাগরিক জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে যেহেতু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেহেতু নিহতের লাশ ময়না তদন্ত করে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা উচিত ছিল। হত্যা, অপহরণ ও ধর্ষণ সারসরি রাষ্ট্রের বিরোধী অপরাধ। সেক্ষেত্রে পুলিশ নিহত গৃহবধূর লাশ ময়না তদন্তসহ আটক স্বামীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ্দ করতে পারত। পরে ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেত। এখন পুরো বিষয়টি চরম ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। অনেতেই বলছেন, প্রভাবশালীদের দৌঁড়ঝাপের কারণে একটি হত্যাকান্ডের ঘটনা নিমিষেই ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।

পেকুয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম জানান, গৃহবধূর লাশ উদ্ধারসহ স্বামীকে আটক করা হয়েছিল। মেয়ের পরিবার থানায় কোন ধরনের অভিযোগ দাখিল করেনি।

পাঠকের মতামত: